Wednesday, July 18, 2007
উড়ে গেলো চৈত্র-বলাকা
পাক খেয়ে শহর শিয়রে
উড়ে গেলো উত্তর আকাশে, আরো একবার
আমরা লাল সূর্যটা বুকে মেখে
মিছিলে কুজনে একাকার,
শুধু দুঃখবিলাসে নিদারুণ ফেটে গেল
আরো এক দুর্লভ পুরনো প্রহর
অযুত চঞ্চল সম্মতিতে
আমরা বেছে নিলাম
রংচঙে উৎসব আর
নৃত্যগীতের গৌণ আকাশ।
হাঁটুজল আবেগের স্রোত
ভুলভাল টি-শার্ট আর
মিগের বেকুব আওয়াজ হয়ে
চৈত্রের বধির এক মধ্যাহ্নকে
দারুণ চপেটাঘাত করে
মিলিয়ে গেল মহাশূন্যে..
আমরা পড়ে রইলাম
পুরনো সেই সড়কের ধারে
সিকি শতাব্দির ক্ষুধা
আর বস্ত্রহীন অপুষ্ট শরীর নিয়ে,
অনিয়ম পুঁজের নর্দমায়...
বিতর্কের নোনতা ফেনায়
ঢেকে গেলে ঠান্ডা বিকেল
দিনের সমস্ত কোরাস গুটিয়ে-
স্বাধীনতার নরম রং ডানায় মেখে-
পশ্চিম-লালিমায় অলক্ষ্যে উড়ে গেল
পুরনো সেই সান্ধ্য-বলাকা...
Tuesday, March 20, 2007
এক্সপায়ার্ড আত্মকথন
তুমি তো আসলে তাÿই
যা তুমি রচেছো নিগূঢ়ভাবে
কলমের ক্ষিপ্রতায় গেঁথে নেয়া সতেরশÿ মুখর বর্ষা-সন্ধ্যায়
তোমার বেদুইন চপ্পলেরা সস্তা ছন্দে মেতে
তোমাকে বইয়ে নিয়েছে যে বিস্ফারিত রঙ্গশালায়,
যে উচ্ছৃষ্ট তুমি অনর্গল ঠুকরে খেয়েছো এখানে সেখানে
ম্যাকডোনালস কিংবা সামরিক সাইরেনে ন্যুব্জ ফুটপাতে
তুমি তো আসলে তাÿই, নাকি?
তোমাকে তবে মসৃণ মহাসড়ক ছেড়ে
ক্ষুধার্ত হারগিলের মতো অসম দীর্ঘাঙ্গি হতে হবে কেন?
অন্ধ-বণিকের মতো অনর্থক হাতড়ে হাতড়ে হাঁপিয়ে উঠে
কেন তোমাকে পেরোতে হবে মলিন পুরনো অবয়ব?
কেন সুস্বাদু রাইফেলে ঘেরা ছমছম সীমান্তের মতো
গোপন সচেষ্ট প্রয়াসে পেরিয়ে যেতে হবে
সময়ের রক্তলাল কাঁটাতার?
আমরা কেন ভীষণ মগ্নতায় স্পৃষ্ট হয়ে
এক্সপায়ার্ড কদমের মতো
অবিরাম ঝুলতে পারছিনা বর্ষার শীতল আশ্রয়ে?
পরিত্যাক্ত, একাকি আর হয়তো বিমর্ষ দারুণ
তবু মন্দ কি! আপন আলয়ে ভীষণ জমাট হয়ে
এক নাতিক্ষুদ্র জনমের মতো
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মিকেল্যাঞ্জেলো হয়ে থাকা!
Monday, March 19, 2007
জলপাইরাঙা স্বদেশ ২
জলপাই গুড়িতে আরো একবার নত হবে
আলোকোজ্জ্বল প্রমত্ত নগর
সন্ধ্যা নামবে হলুদ বিকেলের আগে
আর শেষ নিঃশ্বাস ছাড়লে মুমুর্ষু বিপনী
কোমর দুলিয়ে উঠবে জেগে শ্বাপদ-রাত্তির
কখনও সময় আসে মার্চপাস্ট করে
ঘোলাটে বিউগলের কাঁপা কাঁপা আর্তনাদে
চাপা পড়ে লালন-ভূমি, হাসনের নিবিড় স্বদেশ
কখনও চিলের দেশে আঁধার নামে
বধ্যভূমির গহীন গর্ভে বর্শার তীক্ষ্ণতায়
ডানা মেলে নেমে আসে ধূসর প্যারাট্রুপার
দেখো, আরো একবার
সার বেঁধে হাঁটবার জমাট আদেশে
মাতৃভূমি আড়ষ্ট আমার, কারণ
লোভোন্মত্ত পশুদের বিবাদ অবকাশে
কিঞ্চিৎ ডানা ছড়িয়েছে জলপাইবাগান
উত্তরে মেঘালয়-আসাম
আর দক্ষিণে তিমির বঙ্গোপসাগর।
Tuesday, February 20, 2007
একটি লাল কবিতার খসড়া
মাঝে মাঝে ভাবি, একুশ একটি কবিতা
ফেব্রুয়ারির উষ্ণ কপাল জুড়ে ছোপ ছোপ রক্তে আঁকা
অদ্ভুত এক চিত্রকল্প
আমি জানি, রাষ্ট্রভাষার তুমুল শ্লোগান হলো
ছন্দের প্রথম সবক
শফিউরের রক্ত হলো কালির প্রস্রবণ
পৃথিবীর শেষ বাংলা অক্ষরে যার গন্ধ থাকবে অমলিন
আর বরকত হলো নিখাঁদ বর্ণমালা
মেদ-গন্ধহীন নিরহংকার চারটি ঝকঝকে অক্ষর।
আমি ভেবে দেখেছি নির্ভূল
বায়ান্ন না পেরুলে ঊনসত্তর আসেনা, আসেনা একাত্তর
সোনালী মানচিত্র আসেনা সবুজ পতাকা বুকে
বর্ণমালা না থাকলে শব্দ থাকেনা, শ্লোগান থাকেনা
ডিসেম্বরের কঠিন বাতাসে ভাসেনা জাতীয় সঙ্গীত
আমি জানি, বটতলার ওই প্রচন্ড বিক্ষোভ ছাড়া
মহাকালে হারিয়ে যেতো এই টুকরো স্বদেশ
অগ্নিবীণা থাকতোনা, থাকতোনা পান্ডুলিপি ধুসর
তিতাসের বিষণ্ণ বেলাভূমে ইতস্তত ছড়িয়ে থাকতোনা
নুনের গন্ধমাখা সোনালী কাবিন
ভয় কি?
তুমুল রক্তের শপথে
একবার যারা বায়ান্ন পেরিয়েছে
তারা সহস্র পেরুবে অনিবার্য সহজ উৎসবে।
হেঁটে চলা অবিরাম...
সতেরোশ' মানুষের স্রোত
কিংবা তারও অধিক অনেক
রঙিন বেদানার মতো গড়িয়ে পড়ছে
শহরের থালা থেকে
আর ক্ষুধার্ত আঙুল আমি খাড়া করেছি
এইসব থালার সরোবরে
বহুতল টাওয়ারের মতো
সার্ক ফোয়ারার মতো
আমার আঙুল ছুঁয়ে উড়ে যায়
শত-সহস্য সুতীব্র ফলজ ঘ্রাণ
তবু আমি তীর্থমুখী অভিযাত্রিক
প্রখর অলস মধ্যাহ্ন কিংবা
মরিচিকাময় সহস্র আরব্য-রজনী
তৃষ্ণাকাতর বুকে
একাকি হেঁটে চলেছি অবিরাম।