Thursday, November 27, 2008

জেগে থাকা মানেই অদ্ভুত রক্তমাংসের পঙক্তি

ধুলিসড়ক, রঙমহল আর অন্ধকারের পোড়াগলি হামাগুড়ি দিয়ে পেরিয়ে এসেছো তুমি। উদ্ধত পদ্মের মতো জেগে আছো এই গোলাপী প্রাসাদের জঙলায়। কে তুমি প্রলংয়করী? তোমার রহস্যে কাঁটা হয়ে গেছে কাগজবাহী নৃতাত্ত্বিক মানুষেরা।

নেপোলিয়ন অশ্বক্ষুরের মানচিত্র বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে আমরা মাড়িয়ে এসেছি সহস্র রক্তশরীর। শুঁড়িখানার সমস্ত ঘ্রাণ ছিঁড়ে ছিঁড়ে এই উত্তপ্ত উজ্জ্বল বালিয়াড়িতে এখন ঘুমোবো আমরা। শরাবের মুখর জোসনায় এইসব পরিশ্রান্ত শবদেহদের জাগিয়ে দিওনা আবার।

কোত্থেকে তুমি শিখে এসেছো ঠোঁট আর চোখের সমস্ত যাদুবিদ্যা? তোমার বজ্র আর বিজলীতে আরো একবার ঝলসে গেছে লাল সামিয়ানা, ক্ষুধার্ত শবদেহ আর সুগন্ধী পলেস্তারার মিছিল।

খসখসে অশ্মত্থের চাদর বেয়ে আমি নেমে আসি কখনও সখনও। অশ্রু আর বেদনা দিয়ে শুকনো খাবার কিনে হারিয়ে যাই আঁধারের কুয়াশায়। এই প্রত্ন-পান্ডুলিপির নির্জন কোটরে লুকিয়ে এবার তোমার ঘ্রাণ আর পুরনো শরাব নিয়ে গেলাম।

Sunday, November 16, 2008

আহ্লাদ ও অন্ধকারের সাজঘর

রঙিন রোদ্রের ভেতর দিয়ে তোমরা প্রত্নগুহার পথে হেঁটে যাও। কোলাহলের শিয়রে দাঁড়িয়ে যে পেয়ালায় ঠোঁট রাখো, সেখানে আসলে হলুদ-সবুজ ঘ্রাণ। শবযাত্রার অনুনাদী বাতাসে নিত্য সকাল হলেও তোমাদের ঘুম ভাঙে অথবা ভাঙেনা। মাটির নিচতলায় কখনো ঘুমিয়ে দেখিনি, সত্যিই তোমরা স্বপ্ন দেখো কি না।

কংক্রিটের মেঘ চুষে আনা তীব্র জারক রসে তাহলে আর কি বা হবে? আমি চাইনা পিকাসোর স্বপ্নে আহ্লাদিত উজ্জ্বল চেহারাগুলি আবার আলোর ভয়ে কেঁপে উঠুক। শুধু পুরনো দেয়ালের চেয়ে খানিকটা সজিব হয়ে ওঠো। শুধু দেবদারুর পাতা খসার শব্দের দিকে তোমার অশ্রুদের একটুখানি ঝুঁকিয়ে দাও।

সুসজ্জিত বধিরদের এক বর্ধিষ্ণু জনপদ দেখে এসেছি আমি। সেখানে কষ্টের আপেল, সেখানে পাথরের পাহাড়, সেখানে ধ্রুপদী স্বপ্নের স্ফটিক নিষিদ্ধ বাতাসে বারবার ফেটে গেছে। কয়েকটি জলঘড়ি আর হলুদ মগজ দিয়ে আমি উপন্যাস এঁকে দিয়েছি। আর আত্মপ্রতিকৃতির কণ্ঠ ছিঁড়ে পেরিয়ে এসেছি শীতল-স্বচ্ছ দেয়াল যেখানে কষ্টের প্রশ্বাস জমে জমে প্রতিনিয়ত ইতিহাস হয়ে উঠছে।

Saturday, November 15, 2008

অবসাদ ও অস্তগামী মানবী অথবা শুধুই আঁধারের জন্য

নীলরঙা পোট্রেট, বাচাল জনপদ আর বধির সময়ের পাশে এখনও কি ভেঙে পড়ে নির্বোধ রাত, পদ্মার তিতকুটে পাড়ের মতো? কেমন আছে নুলিয়াছড়ির ঘুমপাহাড়? অথবা সজনে বন ভাসিয়ে কান্নার দ্বিখন্ডিত প্রস্রবণ এখনও কি জেগে থাকে নির্জন সাপের মতো ভয়ার্ত সচকিত?

এইসব প্রশ্নের প্রসাধন খসে পড়ে তোমার অশ্রুরিক্ত ভূগোল থেকে। তুমি কোন নক্ষত্রের গোলার্ধ ধরে আস্তিন গুটিয়ে হেঁটে যাও জানি না। তবু তোমার প্রশ্বাসের লবণে ধসে যায় প্রশান্ত কুটির।

আমি তো এক প্রলম্বিত স্বপ্নের টুকিটাকি তৈজস কুড়িয়ে জড়ো করেছি বহুদিন। এখন এই লাল পলেস্তারা আর সর্বশান্ত সমতটি গল্পের পাশে অপেক্ষার আসন পেতেছি। মরুভূমির ঢেউ বেয়ে সঙ্গিত অথবা কফিনের বহর আসলে আমিই তার গোপন সঙ্গী হবো।

বিবিধ পানপাত্র-কথামালায় একদিন হাশিশের তীব্র ঘ্রাণ এনেছিলে তুমি। বিভ্রম তৃণভূমির অন্ধকারে এত সহস্র রাত কিভাবে হারিয়ে গেছে, হদিস হয়না। কুয়াশা আর নক্ষত্রের পঙক্তির নিচে এখন শুধু লিখে চলা সেইসব নির্মোহ বাসরের গল্প।

এই পদশব্দ, নিশ্বাস আর বিভ্রান্ত অক্ষরমালা আমি ভেঙে দিতে চাই। আমার ক্রুদ্ধ সটান তর্জনি থেকে নিক্ষিপ্ত শরের মতো গোধুলির লালিমায় ফিরে যাও তুমি। নিজস্ব বিষাদ অন্ধকারে আবার আমি তীব্রভাবে বাঁচতে চাই।

Thursday, November 13, 2008

কবি, কফিন আর নির্মোহ আনন্দের উপাখ্যান

লাল সামিয়ানা মোড়া গোধুলির গলিমুখ থেকে নির্গত তোমার শব্দমালা, প্রশ্বাস আর নীলচে বাতাসের মুখোমুখি আমার বেদনাগুলি মেলে ধরতে চেয়েছিলাম, চিলেকোঠার নিষিদ্ধ কপাটের মতো।

গোলার্ধের সমস্ত ক্যালেন্ডার আর নবজাতকেরা এখন ঘুমুচ্ছে। ঘুমের স্বাদ জিহ্বায় নিয়ে এইতো খুলে বসেছি যাতনার উপাখ্যান। হলুদ অ্যাপ্রনের মতো প্রশস্ত সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে ভাবো- ভেজানো এই রং-তুলিকে অপেক্ষায় রেখে কতো আর বধিরের সংলাপ শুনবে।

অথবা তোমার নিজস্ব প্রকোষ্ঠের চৌকাঠ-তেলাপোকা মাড়িয়ে ঘরে ঢোকা অতিথিটি নিছক তস্কর। তেমন জগৎ কোথায় বলো, লুকিয়ে ফেলবে তোমার মেঘ, কুয়াশা আর অশ্রুর নরম গল্পগ্রন্থ।

তারচে' কয়েক পুরুষের কষ্টগুলো গুটিয়ে রেখে বসো এই নির্দোষ তক্তপোষে। এই নাও উষ্ণ পেয়ালাভর্তি দরিদ্র মানুষের পঙক্তি। কিংবা এই তস্কর আলোকযন্ত্রকে উপহাস করে তুমি এবং তোমরা হেঁটে যাও। শ্রেণীবদ্ধ প্রাচুর্যের স্তুপে হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রের অটোগ্রাফ অবজ্ঞা করে বড়ই পাতার ছায়াকে হত্যা করো অবিরাম।

তুমি যেই ঘ্রাণের পোট্রেট এঁকেছো অশ্রুর দেয়ালে দেয়ালে, সেখানে এখনো মিকেল্যাঞ্জেলোর ভেজা তুলি কাঁদছে। কোন দরিদ্র বেদনার খোসা এই উর্বরভূমিতে ছড়াতে নেই।

তোমার কয়েকটা হাসি আর এক টুকরো বিকেল দিয়ে একবার শুধু হদিস করো এইসব হরিৎ ফুলের নিজস্ব স্বদেশ। অথবা নির্বোধ তোতাপাখীর মতো শিখিয়ে দাও শেষকৃত্যের আদিম মন্ত্রাবলী।

Monday, November 3, 2008

আঁধারের সমান চুমুক

পূর্বপুরুষের বাস্তুভিটায় সেদিন জলবিন্দু ছিল না। কিশোরকালে, এলুমিনিয়াম জলাধার হাতে উঁকি দিয়েছিলাম অতীতের ভেতরবাড়িতে। পরিত্যাক্ত কংক্রিট পিলারের পথে পথে গবাদি শিশুদের গুঞ্জন। দেশলাইয়ের ক্রোধে ইতিহাস পুড়ে যাওয়ার আগে এখানেই ছিল গোলাপী রঙমহল।

প্রতিবেশীর শীতল কূপে অস্থির চুমুক দিয়ে ফিরে এসেছি বারবার। জলাধারের ঘ্রাণে বদলে গেছে জীবনের রঙ। অস্তিত্বের পাঁচিলে দাঁড়িয়ে আমি শুধু আমাকেই দেখি। বুঝিনা, কোথায় গেঁথে আছে আমার দীর্ঘশ্বাস।

অন্ধকূপের পাথুরে দেয়ালে চিত্রকল্প এঁকে অতীতের নাভিমূলে নেমে যায় ধাতব জলাধার। পষ্ট শব্দে তার ক্ষয়ে যায় অন্যান্য সঙ্গীতেরা।

কয়েক জোড়া হাত ও অশ্রুর মৈথুন

হাত তুললেই
নেমে আসে গজবের সামিয়ানা
আজকাল

অপ্রাপ্তবয়স্করা
হাসে আবার, মুখ টিপে
আর বন্দুকের গল্পে গল্পে নামিয়ে আনে মৃতদেহ
মুঠোফোনের সঙ্গীতের মতো
আনন্দে

জানতে চাই
চিন্তায় জমছে কি না মুহূর্তের পারদ
নিশানা খূঁজছি, খুঁজছি

মেরুদন্ডের নিচতলায় ক্লেদের পাহাড়
যাতনা বলা যায় তারে
মাদুরের শিরোনামে ত্রিভুজেরা নীল হয় খুব

আসছে
সময়ের সংলাপ
কী করে শিল্প হয় নির্যাতন

ভয়
সব বুঝি শেষ হয় হয়
ভয়
কিছুই যে ফুরোবার নয়

Friday, October 31, 2008

বকুলগন্ধী চঞ্চলতা হারিয়ে যাওয়ার পর

নদী শুষে নাও বনেদি শরাবের মতো। আর নাও রঙিন উপসাগর। আলস্য রঙধনু ছুঁড়ে দাও বিছিয়ে রাখা মেঘ আর বিষন্ন আকাশের মলিনতায়। চোখের তৃষ্ণা দিয়ে তোমার নিজস্ব কারাগার থেকে এই বিষাদময় কোলাহলের দুরত্ব মেপে দেখো-- অনায়াসে খুঁজে পাবে ক্রয়যোগ্য অপমান আর অশ্রুর অনুজ মানচিত্র।

এই সুরযন্ত্রের পাঁজরে কয়েকটি বোবা পান্ডুলিপি সাজিয়ে এখন ঝলসানো চিত্রকলার মতো বধির তুমি। শ্যাওলার অন্ধকারে বরং ঘ্রাণ নিয়ে দেখো-- নিশ্চিত মিলে যাবে দু-মুঠো লালচে বাতাস।