মেস লাইফের কিছু সৌন্দর্য আছে। যে জানে সে জানে। রাত এখন ১২ টা ৪৭। মাসের শেষে সবারই পকেট মোটামোটি গড়ের মাঠ। তারপরেও ঐতিহ্য বলে কথা। দুই পদের মাছ, রোস্ট, পোলাও, সালাদ আর আড্ডা সহযোগে জম্পেশ একটা ফিস্ট। সাজু ভাই ছিলেন আমার গেস্ট। একসাথে বসে সামি ইউসুফের মিউজিক ভিডিওগুলি রিভাইজ দিলাম। যথারীতি সিডিটা দিতে বললেন। বিশেষ একজনের স্পর্শমাখা সিডিটা কাউকে দিতে আমার খুব কষ্ট হয়। আই ডোন্ট ওয়ানা লেট ইট গো এনিহয়্যার। হাওয়েভার, দিতে হলো। খুব সাবধানে দেখে দ্রুত ফেরত দিতে বলা ছাড়া কিছু করার ছিলনা।
সবাইকে বিদায় দিয়ে একাকি হতেই আমার আপাতঃ সার্বণিক সঙ্গী বিষণíতাটা রিস্টোর হলো। মনে পড়লো, কিভাবে যেন চলমান ইতিহাসের সাী হয়ে যাচ্ছি। চলমান ২০০৬ আমার সারা গায়ে, নিউরণের পরতে পরতে জড়িয়ে যাচ্ছে। পেশাগত কারণে প্রতিদিনই দেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের অসংখ্য ডান-বাম-ধর্মনিরপে গন্ধমাখা আনএডিটেড দৃশ্যমালা দেখছি। দেখছি মুহূর্তের বিরতিতে কিভাবে মানুষ লাশ হচ্ছে। কিছুণ আগেও মানুষটা আমার মতোই শ্বাস নিচ্ছিল। জোকস শুনে হাসছিল। অনভ্যাসে সিগারেটে টান দিতে গিয়ে খক খক কাশি। তারপরেই অট্টহাসি। আমাদেরই কারো মতো একটা ছোট্ট বোন আছে তার। অনেক রাত পর্যন্ত খাবার সাজিয়ে বসে থাকার মতো একজন মমতাময়ী মা আছে। স্ত্রীও আছে হয়তো। কিভাবে সে বসে থাকে কে জানে? আর আজ? জীবনানন্দের কবিতা থেকে ধার করা ছাড়া উপায় নেই:
çমড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজে
অাঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার
কোনদিন জাগিবেনা আর
জাগিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম অবিরাম ভার সহিবেনা আর।...ÿ
এরকম অনেক অনেক জীবনানন্দের কবিতা আমাকে প্রতিদিনই দেখতে হচ্ছে। দণি কোনার ডেস্ক থেকে মুনিরা আপাকে সদ্য আসা কোন ফ্যাক্সের হ্যান্ডআউট হাতে আসতে দেখলেই- কি মুনিরা আপা, কয়টাকে মারলেন। শফিক নিউজরুমে ঢোকা মাত্রই নিউজ এডিটরের প্রশ্ন- কি ব্যপার? নো ক্যজুয়ালটিজ প্রভাস দা। ধুর, তাহলে আর কি হলো। ওকে ছোট করে নিউজ করেন। বিবিসিÿর কোন ব্রেকিং চোখে পড়লে মুকুল ভাইয়ের আপলিফটেড ভয়েজ- কি ব্যপার শুভ। ইরাকে ম্যাসিভ এ্যটাক মুকুল ভাই, তিরাশিটা উইকেট পড়েছে। হুম, অনি ছুটিতে, তুমি ফিড নিতে বলে দুই মিনিটের একটা প্যাকেজ করো। আশরাফ ভাই ইনডেপথ করছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনম ব্যক্তিটা বোমা হামলায় মারা যাওয়ায় নভেরার ভাস্কর্যের মতো নির্বাক পাথর হয়ে গেছে এক স্ত্রী। ছোট্ট মেয়েটার দুচোখে ধলেশ্বরীর স্রোত। পাষন্ড কোন গৃহকর্তার নৃশংসতার নমুনা দেখছি অহরহই। আগুনে ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে কোন পিতৃমাতৃহীন কাজের মেয়ে। ফুটেজ চোখে দেখার মতো না, দুহাতে চোখ চেপে রাখতে হয়। তবুও মাঝে মাঝেই ভয় হয় মানবিক বোধের শেষ সঞ্চয়টুকুও না জানি কবে হারিয়ে ফেলি। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখে হয়তো বলে ফেলবো- এ আর এমন কি? মনে প্রাণে চাইছি দিনটি না আসুক। না আসুক। না আসুক।
এরকম অশুদ্ধতা নিয়েই অভ্যাসবসে মাঝে মাঝে কবিতা লিখতে বসি। দেখি আমার রক্তমাংশে কেবল পালানোর খায়েশ। কীট্স কি জীবনানন্দের মতো বিষণí বৈরাগ্যের সুর। পার্থক্য শুধু এই- অবচেতনেই কাউকে যেন হাতড়ে ফিরি। অতি পরিচিত শুভ্রপালক কোন অভিযাত্রীকে। সেরকমই এক প্রচেষ্টার গল্প কবিতায় তুলে দিলাম আজকের মতো। রচনাকাল ৩১ মার্চ ২০০৬।
শুভ্রপালক অভিযাত্রীর খোঁজে
ধলেশ্বরীর বাঁকের মতো সড়কেরা
রহস্যের চুম্বক হয়ে হারিয়ে গেছে
এক দঙ্গল ব্যস্ততার তিমিরে।
সন্তর্পণে হাতড়ে ফিরি মেঠো পথটাকে;
কোথায় ঘোলা স্রোত, তবলচি বৈঠা কিংবা
অসম্ভব ধোঁয়াটে নত্রের মতো শুভ্রপালক বন্ধুবর?
ধুম্রধোঁয়ার ঢেউ ভাঙে, দুলে ওঠে পিচঢালা ধলেশ্বরী।
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দৃষ্টিটাকে ছুঁড়ে দাও দুরে,
মিছিলে কুড়ানো গণতন্ত্রী টিয়ার শেলের প্রিতায়।
দেখো, শহুরে গলুই ঘিরে শুধুই কাকস্য আকাশ।
এই সমস্ত হলুদ দুঃসময়ে হঠাৎ
হ্যালুসিনেশান কিংবা অচেতন ভুলের বশে,
অথবা কে জানে কেন, অতিচেনা ঘোরের ভাঁজে
নাসারন্ধ্রে ফুঁসে ওঠে নারীবাদী হেঁসেলের ঘ্রাণ।
বিরাট নাসারন্ধ্রমাখা অবয়ব আকাশে মেলে ধরে
সবুজ প্রার্থনা করি কিছুকাল, অথবা
শুধুই মেঘ দেখার লোভের মত কিছু।
সারবাঁধা কার্ণিশে থোকা থোকা জেগে আছে
হলুদ হলুদ ফিকশান, লাল লাল প্লট।
কান্ত হওয়ার পরিপাটি এমন সরঞ্জাম
মাতম করেই বা কোথায় পাবে বলো?
তারচেÿ পথিক শোনো! বিষণí রোদন ভাল।
মেয়াদোত্তীর্ণ বেশবাশের সাথে
শেষ সঞ্জিত কান্নাটুকুও ছুঁড়ে দাও।
এখানে ঝিলামের সজিব মানচিত্র বিছিয়েছি দেখো-
বরফজলের শীতল ওম গায়ে মাখবো বলে।
যদি চাও তবে-
ভলগার হিম হিম সমস্ত গানই তোমাদের;
তীব্রভাবে ভাগ করে নাও পরস্পর।
পেঁজাতুলোর দোদুল্যমান ভেলায়
সমস্তই উড়িয়ে নিয়ে যাও অতঃপর।
আমাকে শুধু দাও, নিঃশর্ত আনন্দে উজ্জ্বল
একজন অসম্ভব মমতাময়ী অভিযাত্রী।
Thursday, December 14, 2006
মন বলে পালাই পালাই...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment