এই যে দক্ষিণে ঘুরে যাওয়া মোড়, এই যে এম্বুলেন্স, এই যে ফুটপাতে গড়িয়ে পড়া পচা আপেল, কলা, এই যে রিক্সা অলার মধ্যাহ্ন-ধুমপানের হালকা গন্ধে খুবলে ওঠা ফুটপাত, আর মুরগীর চিড়িয়াখানা, এসাইলাম, বাজারী লোকজনের আশির্বাদে নিত্য গন্ধ ছোটা হাতিরপুল.. এখানেও মানুষ স্বপ্ন দেখে, ভাবতে পারো। দিন-তারিখ মনে নেই এই অদম্য স্বপ্নচারীদের পড়শি কোন এক রিক্সায় চেপে বসেছিলাম একবার। আচ্ছা, খুলেই বলি। দেখো, এরকম সবুজ দেশের রাস্তাঘাট সাধারণত শুক্রবারে ঝিমিয়ে পড়ে। সবাই ছুটির আমেজে ঘুমের ওভারটাইম শুরু করলে রাস্তাঘাটগুলোও কেমন বিশ্রাম পায়। কিন্তু তুমি তো জানো, সেদিনই ঘটতে হলো ঘটনাটাকে। তখনও কিন্তু তুমুল বসন্ত এসে শীতকে লাল কৃষ্ণচূড়া চোখ রাঙিয়ে বলেনি- এবার গুডবাই। তবু উত্তেজনার কারণেই হবে, ফুলস্লিভ হাতাটাকে গুটিয়ে ছেলেটা রিক্সায় চড়ে বসে আর অনেক দিন পর ভরাট শুক্রবারে হাতিরপুল বাজারের বিপুল জীবনস্রোতের মধ্যে দিয়ে উড়ে গেলেও কোন গন্ধ পায়না সে।
গন্তব্য একটা জানা থাকলেও সেটা শুধু রিক্সাঅলাকেই বলা। আসলে কিন্তু আকাশে ওড়ার অনুভব হয়। এগুলো ঠিক বিমানও নয়, কিংবা কে জানে হয়তো সোনালী চিলের মতো কিছুটা কিংবা অনেকটাই আলাদা, অন্যেরা ঠিক অনুভব করবেনা। সবজিবাগান রোডটা যখন বিপুল ছায়া দিচ্ছিল, তখনই মনে হলো কথাটা- একটা পুরাতন বাজি আমি নতুন করে ধরতে রাজি। মানুষের ব্রেইন, কম্পিউটার মেমোরি, আরো কি কি যেনো নিয়ে। এসব মনে হলো কেনো.. তখন আমার দারুণ সব এক্সাইটিং গান মনে পড়ছিল। তুমি আসবে বলে তাই, আমি স্বপ্ন দেখে যাই...। ব্যাটা অঞ্জন দত্ত বেকুব। হাসিও পাচ্ছে। আরেকটা জিনিস মনে পড়ছে। হাতে মোবাইল ধরা, গিফট প্যাক, ট্রেম্বলিং অবস্থা.. এরকম সময় কিন্তু সুরের দারুণ আকাল.. গলা দিয়ে সুর বেরোয়না। দেখা গেলো অঞ্জনের কথাগুলো সুমনের সুরের সাথে মিলে মিশে দারুণ খিচুরি..। হাসছো? আসলে কিন্তু ওটাই তখন অন্যরকম। আমার তখন মনে হয়েছিল ওরকম কোন জন্রা একসময় সৃষ্টি হবে গানের জগতে। দেখো, হবে কিন্তু।
হাওয়েভার.. এই তো চলে এলাম বেইলি রোডের কাছাকাছি। নাহ্ মনে হচ্ছে বলতে পারবোনা আর। বনেদি সেই অনুভূতিটা আরব্য রজনীর পঙ্খিরাজে চড়ে হাজির হয়েছে। আমি আর এগোবো কি করে বলো? আমি রিয়েলি কাঁপছি। কিন্তু রিক্সাঅলা তো থামছেনা, ওকে তো আমি একটা গন্তব্যের কথা বলেছি। আই মাস্ট স্টপ হিয়ার আদারওয়াইজ আই ওনট বি এইবল টু রাইট এনি মোর। কারণ এই রিক্সাঅলা আর কিছুদূর যাওয়ার পর আমার মাথা ব্লö্যাক আউট হয়ে যাবে। সো বেটার স্টপ হেয়ার। অতীতমুখী টাইম মেশিনটা আপাতত স্টপ্ড। ভয়ঙ্করভাবে সময়টাতে আটকে যাচ্ছিলাম আরেকটু হলেই। আমি বরং খবরটা দিয়ে দেই আর কিছু þí্যাপশট্স, ফ্রি।
খবর. কোন এক ফ্রাইডেতে বেইলি রোডের গাইড হাউজ, মহিলাসমিতিগুলো ঘুমাচ্ছিল। ঘুমাচ্ছিল দোকানপাট আর ফুটপাতগুলোও। জাস্ট কয়েকটা দোকান জেগে ছিল তবুও ঝিমুনি অবস্থা। কোত্থেকে বলতে পারবোনা, হালকা একটা ইংলিশ মিউজিক শোনা যাচ্ছিল। ভিকারুন্নিসার মাথার উপরের নারিকেল গাছগুলো জাস্ট একটু বেশি কোমল। ঠিক তখনই বেইলি রোডের ইতিহাসে অদ্ভুত সুন্দর একটা গল্পের জন্ম হচ্ছিল...
þí্যাপশট্ ১. ফ্রেমে চারজন মানুষ। দেয়াল ঘেষে ফুটপাত। ফুটপাতের কোল ঘেসে কিছু নোংরা পানি জমে আছে। ফুটপাতে একটা ইলেকট্রিক পোল। পোলের পাশে দাঁড়ানো দুজন। একটা ছেলে একটা মেয়ে। তৃতীয়জন রিক্সাঅলা, চতুর্থ রিক্সার সিট থেকে নামতে উন্মুখ। ছবির দুÿজনের অবস্থা কিছুটা ট্রেম্বলিং।
þí্যাপশট্ ২. শটটা পশ্চিম দিক থেকে নেয়া। ওয়াইড শট। পুরোটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। ডানের ফুটপাতে এক চা অলা। দুরে ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যাচ্ছে অলস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে। তিনটা ছেলে মেয়ে রাস্তার ডান পাশ ধরে পূব দিকে হেঁটে যাচ্ছে। একটা ছেলে বেশ সামনে। বাকি দুজন একটু পেছনে। ছবিতে একজনের অবস্থা ট্রেম্বলিং।
þí্যাপশট্ ৩. ব্যাক টু ক্যামেরা টাইপ শট। একটা আধো অন্ধকার কালারফুল টেবিলের মাথার উপর দিয়ে একটা কাউন্টার দেখা যাচ্ছে। কাউন্টারে বিরাট বিরাট কয়েকট জুস ব্লেন্ডার, একটা ওভেন, পেছনে তাকে সাজানো কালারফুল জুস আর ড্রিঙ্কসের ক্যান। কাউন্টারে দুজন মধ্যবয়স্ক। তিনটা মাথা টেবিল ঘিরে বসে। টেবিলে কিছু ছড়ানো বই, ক্যাসেট, একটা এমপিথ্রি প্লেয়ার, সাথে ফ্রেন্স আর চিকেন ফ্রাইয়ের তিনটা ডিব্বা, ড্রিঙ্কস। নোবডি ট্রেম্বলিং, এভরিবডি নরমাল হিয়ার।
þí্যাপশট্ ৪. ক্লোজ শট। জায়গাটা চেনা যাচ্ছেনা। একটা ছেলে কিছু একটা দিয়ে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার মাথায় বাড়ি দিচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো কামরানকে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছেনা... মনে হচ্ছে বেশ অবাকই হয়েছে সে।
Thursday, December 14, 2006
আসলে কিন্তু সেই তোমাকেই চাওয়া...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment