Thursday, December 14, 2006
ঘনঘোর কুয়াশাসময়...
প্রথম প্রথম এরকম হয়। দেখা গেলো পুরোটা সকাল, দুপুর জুড়ে ঝিক ঝিক শব্দে তাল মিলিয়ে তুমি বিভিন্ন শেডের সবুজ দেখলে শুধু, এরপর গরম সিদ্ধ ডিমের ঝুরি নিয়ে অনেক গম্ভীর জলে ভেসে থাকা লঞ্চগুলিতে নাতিকিশোর অলিভার টুইস্টদের দেখলে অনায়াসে রাবার বলের মতো লাফিয়ে যেতে, তারপর অনেক নতুন সাইনবোর্ড দেখার সুযোগ হলো ঝিমিয়ে পড়া দিনের শেষ সময়টুকুতে। খুব চাপামতো একটা জায়গায় পড়ে থেকে বিকট হর্ণের আওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে ইটের ভাটা থেকে দৌড়ে আসা বাতাসগুলোকে কান আর চুলের ভাঁজ দিয়ে অনবরত বাইপাস দিলেও দেখবে পোস্টার লাগানো মাইলপোস্ট আর গোলড লিফ মার্কা দোকান শেষই হচ্ছেনা যেন। প্রায় সন্ধ্যা নামলে দেখবে সবুজ ফিকে হতে হতে নিয়ন সাইনের মাথায় রঙিন বাতি জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। তার মানে - তুমি শেষমেষ ঢাকা পৌঁছে গেছো।
এরকম সাদামাটা শুরুটাই অ্যাপ্রুভ করে নিলেও উত্তেজনার অভাব হয়না কিন্তু। তারপর দেখো কি হলো... অনেক বিকট দর্শন ট্রাক বাসের তাড়া খেয়ে অনেক ঘোরা পথে, অলি-গলি হয়ে একটা তেপেয়ে যানের নতুন রিদম শুনতে শুনতে তুমি যেখানে পৌঁছলে সেখানে নরম শব্দ করে অনেক লাল, নীল, পীতাভ, সিলভার, সাদা রঙের কার তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যাবে। রাতের অস্পষ্ট গুঞ্জনের সময় যেখানে একটা আধা ময়লা বিছানায় চিকন হয়ে মুখ গোঁজার সুযোগ হবে, সেটা একটা মেস। কতক ভাগ্য বিড়ম্বিত, কতক ভাগ্যনির্মাণপ্রয়াসী প্রাণী পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এক অপরিচিত বুয়ার রান্না করা তরল ঝোলের গন্ধে এখানে একত্র হয়। দেখা গেলো দূর্ঘনাক্রমে কখনো একটা মাংসল মাছের টুকরা জুটলে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো তিন ঘন্টার জন্য। কিংবা অন্ধকারের আশির্বাদে তুমি আরো খানিক সুবিধা হাতড়ে নিলে হয়তো।
তবে গল্পের শুরু হতে হতে ঢাকা শহরের প্রথম সূর্যোদয় অতীত হয়। অন্ধকার রাতের মিউটেড ভলিউম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলে মেসের প্রাণীগুলি প্যান্ট-শার্ট ইন করে কেউ অফিস, কেউ ভার্সিটি, কেউবা একটা ভঙ্গুর চাকুরির আশায় অনেক গহীন পুরনো কোন আত্মীয় খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। মিউটেড সাউন্ড থেকে থেকে বাড়তে কমতে থাকলেও সূর্যের আঁচ বেড়ে ওঠার খানিক আগেই একদলা মৌমাছির গুঞ্জন হঠাৎ বেড়ে ওঠে। তখন দেখবে কোন অদ্ভুত সুন্দর চলচ্চিত্র দেখার স্বাদ পাচ্ছো যেন তুমি। কিংবা এর চেয়েও অদ্ভুত সুন্দর কিছু যখন এক দঙ্গল মাতাল হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে খুব মোটা জাজিমগুলো ছুড়ে ফেলে রাস্তা নরম করে দেবে, প্রায় প্রতিটি আসবাব পা হারাতে থাকবে, একটু মাথা নিচু করে রাখলে মেঝেতে আছড়ে পড়া পোর্টেটের ঝনঝনের ছন্দটাও টের পাবে, তখন বিরাট বার্বিডলের নরম পাদুটো বুকে আঁকড়ে ভিকারুন্নেসার প্রথম শ্রেনীর প্রথম ছাত্রীটিকে দেখবে ভয়ে থরথর কাঁপছে, আর নরম পাগুলো মা-কে খুঁজে ফিরছে দারুণ। আহা, তখন সূর্যের চনমন করে ওঠা রোদ্রে দাঁড়িয়ে অনেক জানালা, বারান্দা, কার্নিশ, দরজায় দাঁড়ানো কৌতুহলী মুখ, অফিসমুখী বাবা বা স্কুলফেরত মেয়ের অবাক চাহনির ভাষা রপ্ত করতে ব্যস্তহয়ে পড়লে একটি স্বচ্ছল, সম্ভ্রান্ত, সবুজ ফ্যামিলির নীল অধ্যায় শেষ হয়।
[খুব টায়ার্ড লাগছে। বাকিটুকু পরে..]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment