Thursday, December 14, 2006
নক্ষত্র রাতে ঘেরা টুকরো সময়
দারুণ কোন নক্ষত্র রাতে বাড়িফেরা মানুষের আনন্দ-আহ্লাদে ঠাসা কোন বাসের কোনায় বসে র'বো আমি। ঢাকা ছাড়তে চাইলে যা হয়, ধুলোর বাতাস বইবে কানের দুপাশ দিয়ে আর ইথার হাতড়ে হাতড়ে ক্লান্ত হয়ে একসময় নিস্তব্ধ হয়ে যাবে এফএম ৮৯.৬। অতি পরিচিত এই শহরীনির হলুদ নিয়নগুলো ফিকে করে দিয়ে একসময় সাভারের জংগলে ঢুকে যাবে আমাদের বাস। সারা রাত মুক-বিষণ্ন গাছ, বিরাণ ইটের ভাটা আর পরিপাটি ফসলের মাঠ খচতে খচতে, এক নক্ষত্র রাতের নগ্ন কুয়াশার আদর গায়ে মাখতে মাখতে অনেক দূরে চলে যাবে আমাদের বাস।
হুম, ঈদে বাড়ি যাচ্ছি। বাড়ি ফেরার এরকম সময়টাতে আমি দ্বিমুখী চিন্তার টানাপোড়ানে ঘন্টার পর ঘন্টা নির্ঘুম আকাশে তাকিয়ে থাকি। পেছনে ফেলে আসা হলুদ শহরের রক্ত মাংস একদিকে, অন্যদিকে মা, বাবা.. অনেক পুরনো নদীর পাড়, মটরশুটির ক্ষেত, মমতা আর মমতা। পষ্ট টের পাই, আমি এক দ্বিখন্ডিত মানুষ। দ্বিভাজিত এই সত্ত্বার অজস্র প্রশ্ন নিরুত্তর ইথারে ভেসে বেড়ায় শুধু। এবারও ব্যতিক্রম হবার নয়।
দিনে বাড়ি ফেরা খুব একটা হয়না। যথারীতি অনেক রাতে বাড়ির দরজায় নক করবো। কেই জাগার আগেই মা জেগে উঠবে। আমাকে জড়িয়ে ধরবে। মায়ের কথায়, চোখে জল। আমিও কাঁদবো, শুষ্ক চোখে। একটু পরে বাবার গলা শুনবো। ওই কন্ঠদুটো না থাকলে কি করতাম কে জানে????
ঈদ কেটে যাবে আনন্দ খুনসুটিতে, পিচ্চি-পাচ্চাগুলোর সাথে কুস্তি করতে করতে। আরেকবার ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে অন্য কোন নক্ষত্র রাতের দরজায় ঋজু হয়ে দাঁড়াবো আমি। মা-বাবা আমাকে বিদায় দেবে। আমি ভেজা চোখের দিকে তাকাবোনা কখনোই। না আমি কাঁদবোনা। দারুণ বিলাসী কোন ব্যবসায়ী বাস আমাকে নিয়ে নক্ষত্র রাতের নিকষ অনিশ্চয়তায় উড়াল দিলে খুব গোপনে চোখ ভিজে উঠবে আমার। সুখের কথা, ক'মুঠো নক্ষত্র আর জোনাকির দঙ্গল ছাড়া কেউ দেখবেনা সেটা।
প্রিয় ব্লগারস, আপনারা চমৎকার একটা ঈদ কাটান, এই শুভ কামনা। ঈদ মুবারাক।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment