Thursday, December 14, 2006

খসে পড়া পেসমেকার


অনেকগুলো ক্ষুধাকাতর দিন, মাস শেষে একটা আনন্দের যাদুকরী পুটুলি খুলে ধরতে উন্মুখ। রঙিন রং, রঙিন আকাশ-বাতাস, রঙিন মৌসুমী উজ্জ্বল শহর-শহরতলী, নতুন টুং-টাং, নতুন হাসি, নতুন শিশুর মতো উচ্ছ্বল কিশোর-পৌঢ় সকলে। আমরা অল্প ভেজা স্বপ্নালু চোখে এই শেষ প্রহরে আনন্দের প্রতিচ্ছবিগুলোর অদ্ভুত সুন্দর ওড়াওড়ি দেখি। এরকমই একটা সুগন্ধী সন্ধ্যায় অল্প 'জন আত্মমগ্ন পরিচিত মানুষ হঠাৎ দারুণ বিষণ্ন হয়ে পড়ে।

ঈদের কুসুম উষ্ণতার বুদবুদ এখনও বাতাসে। একমুঠো ঠান্ডা প্রশান্তির কাঙাল মানুষের এই স্বল্পাতয়ন আনন্দে বিষাদ টেনে আনাটা কোন কাজের কথা না। সচেতনভাবেই অল্প কথাতে এই অদ্ভুত গল্পটা শেষ করবো। গল্পটাও সুন্দর। অদ্ভুত সুন্দর!

আশিকেরা যখন বাজার তালিকা গুনে গুনে কিনে নেয়া আনন্দের বোঝায় ন্যুব্জ, নতুন গড়ে ওঠা মার্কেটের লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আলো যখন প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে হালকা বাতাসে ভেসে বেড়ানো শিশুগুলোর নরম গালে প্রতিফলিত আনন্দের রঙ, কিংবা অল্প হুল্লোড়ের ফাঁকে নিরবে বন্টন হয়ে যাচ্ছে মুঠো মুঠো প্রবাসী উষ্ণতা, তখন অল্প 'জন কম্পমান মানুষ অসীম সাহসে আনন্দের সব প্রসাদ আলতো পাশে ঠেলে একটা মাঝারি মাইক্রোবাসের চিন্তাক্লৃষ্ট গর্ভে ঢাকাগামী মহাসড়কের আনন্দ-প্রকম্পিত-ভীড়ের ফাঁকে ফাঁকে এক চিলতে বাই-পাস খুঁজতে দারুণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাইক্রোবাসের পেটে ডা. আজিজ যন্ত্রনাকাতর ঘুমুচ্ছেন। সদা-বিনয়ী, স্ব-চালিত ডা. আজিজ অনেকদিন পরে অন্যদের কিছুটা বিচলিত হওয়ার সুযোগ দিয়ে চিন্তামুক্ত বিশ্রামে অংশ নিয়েছেন।

চার ঘন্টার দীর্ঘতম পথচলায় ডা. আজিজের সঙ্গী-যাত্রীদের মানসিক অবস্থার কোন খবর আমরা জানতে না পারলেও একটা পেসমেকারের মমতায় রাজধানীর কোন হাসপাতালের নরম বিছানায় ডা. আজিজের আপাত শান্তিময় ঘুমের গল্পটা আমরা যথাসময়ে জেনে যায় ঠিক-ঠিক। ডা. আজিজের আপাত শান্তিময় ঘুম দুটো দিনের বিশ্রামহীন মানুষগুলোকে যেন বিশ্রাম দেয়। ঈদের দিনটাতে বহুকালের চেনা মুখগুলোতে আনন্দটুকু ধরে রাখতেই যেন সাদা চাদরেও হাসিমুখে শুয়ে থাকেন তিনি। স্বজনেরা অন্তত ঈদের মিষ্টি খাবারে তাকানোর একটু অবকাশ পায়, খাওয়া হয় কিনা সে খবর যদিও জানা যায়না কখনও।

ঈদের দিনটা বিষণ্ণ অবহেলায় কেটে গেলে পরদিন খুব ভোরে মোবাইলে কান্নার শব্দটা প্রথম শুনতে পায় সবুজ। জানা যায় ঈদের দিন রাতের অনেক গভীরে মুহুর্মুহু আনন্দে ভাসা আলোকসজ্জা, বোমাবাজি আর বিরাট ডেক-সেটে হিন্দী সঙ্গীত বাজার কোন এক নির্জন অবকাশে খসে পড়ে গেছে ডা. আজিজের পেসমেকার।

No comments: